মাদকের সহজলভ্যতা, পারিবারিক অসচেতনতা, শিক্ষার অভাব সহ বিভিন্ন কারণে উঠতি বয়সী যুবকদের অপরাধমুলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিছুদিন আগেও যে বিষয় আমাদের অজানা ছিল তা যেন সামাজিক ব্যাধিতে রূপদান করেছে। এক শ্রেনীর উঠতি বয়সী যুবক বা কিশোরদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আজ হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা নেই।
এমনই কাজে লিপ্ত ছিল হঠাৎ একদিন পরিচয় হলো কিশোর বয়সী এক ছেলের সাথে। কথায় কথায় উঠে আসল তার বিভিন্ন অপরাধমুলক কর্মকান্ডে সাথে জড়িত হওয়ার ঘটনা। এক পর্যায়ে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কেন এমন অসামাজিক কাজে যোগ দিয়েছিলে। সে বলে আমি প্রথমে মাদক গ্রহণ করতাম। একসময় বড় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ি। আমার মাদকাসক্ত হওয়ার ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে পরিবার থেকে আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। মাদকের টাকা যোগাড় করতে শুরু করি চুরি। এক পর্যায়ে আস্তে আস্তে চুরি থেকে বড় ধরণের অপরাধে জড়িয়ে পড়ি। সেখান থেকে পরিচয় হয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা সহ সন্ত্রাসী ক্যডারদের সঙ্গে। বিভিন্ন সমস্যায় তাদের কাছ থেকে সহযোগীতা পাওয়ায় আস্তে আস্তে গড়ে ওঠে কিশোর বয়সীদের নিয়ে আমাদের গ্র“প। যার ফলে সমাজে আমাদের অনৈতিক কাজের প্রভাব বিস্তার আরো বেড়ে যায়।
২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় দুই গ্রুপের বিরোধের জেরে স্কুলছাত্র আদনান নিহত হওয়ার পর ‘গ্যাং কালচার’ আলোচনায় আসে। এরপর ঢাকার বাইরেও কিশোরদের একাধিক গ্রুপ গড়ে উঠে। এখনও বিভিন্ন অঞ্চলে কিশোর গ্রুপের সদস্য সক্রিয় রয়েছে বলে অনেকেরই ধারনা। করোনাকালেও মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমুলক কার্যকলাপের ঘটনা ঘটে।
বিভিন্ন ধরনের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের কারনে প্রভাব বিস্তার, মাদক, অবাধে ইন্টারনেট ব্যবহারসহ নানা কারণে এ ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে অনেক কিশোররা। এছাড়াও পরিবার থেকে সঠিক শিক্ষা না থাকায় কিশোরদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এমনকি শিশু-কিশোরদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রভবনাতাও কমে যাওয়ায় এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অনেনেকই মনে করেন।
কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের তথ্যমতে যে কিশোররা ওইসব কেন্দ্রে আছে তাদের ২০ শতাংশ হত্যা এবং ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি ৷ ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সের কিশোররাই বেশি অপরাধে জড়াচ্ছে৷ কিশোররা, চুরি, ছিনতাইয়ের মত অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে বলে তথ্যে জানা যায়৷
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চার কোটি শিশু-কিশোর৷ এরমধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷
অপরাধমুলক কার্যক্রম থেকে কিশোরদের দমন করতে আমাদের পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধি অতি প্রয়োজন। সেই সাথে মাদকের সহজলভ্যতা, শিশু শ্রমও এর জন্য দায়ী বলে অনেকেই মনে করেন। তাই বর্তমান সময়ে প্রতিটা পরিবারের শিশু কিশোরদের সবসময় নজরে রাখা খুবই প্রয়োজন।