সারাদেশে করোনা সংক্রমনের হার বৃদ্ধি পাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে মৌলভীবাজার। দ্বিতীয় দফায় তালিকাভুক্ত ২৯টি জেলার মধ্যে মৌলভিবাজার অন্যতম। করোনা সংক্রমণের শীর্ষে থাকলেও এ জেলায় নেই কোনো করোনা টেস্টের ল্যাবরেটরি। করোনা টেষ্টের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকদের আনাগোনা ও প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার আরো জটিল হচ্ছে। সেই সাথে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন জেলাবাসী। যার ফলে করোনা সংক্রমন নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
পিসিআর ল্যাব না থাকায় বাধ্য হয়ে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা, সিলেট পাঠাতে হয়। সেখান থেকে নমুনা পরীক্ষার ফল আসতে সাধারণত পাঁচ থেকে সাত দিন লাগে। দূরে ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানোর কারণে এবং জেলায় ল্যাব না থাকায় বিভিন্ন সময় নষ্ট হয়েছে প্রায় ৬২৫টি নমুনা।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি পাওয়ায় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পরিপূর্ন চিকিৎসা সেবা দিতে অনেকটা হাপিয়ে উঠছে। এখানে পিসিআর ল্যাব বা করোনা টেষ্টের কোন ল্যাবরেটরি না থাকায় যথাসময়ে সঠিক সেবা প্রদানে অনেক সময় বেগ পোহাতে হচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। একই সাথে পিসিআর ল্যাব না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়ছে জেলাবাসী। যার ফলে অতিদ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে এখানে করোনা টেষ্টের দাবী জানিয়েছেন জেলার অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নমুনা সংগ্রহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলছেন, করোনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে নমুনা সংগ্রহ করে সিলেট বা ঢাকা পাঠাতে হয়। ফলে অনেক সময় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নমুনা রাস্তায়ই নষ্ট হয়ে যায়। আর নমুনা নষ্ট হলে পরীক্ষার ফল ভুল আসার সম্ভাবনা থাকে।
স্থানীয় রিপন সহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও মৌলভীবাজারে টেস্টের ব্যবস্থা না করায় করোনা পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১৮ জুন মৌলভীবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ডিও লেটার দিয়েছিলেন মৌলভীবাজার-১ আসনের সাংসদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন। এর আগেই তখনকার সিভিল সার্জন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন করেন।
সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ জানান, আইইডিসিআরের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, (২২ মার্চ-২ এপ্রিল) দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হারের দিক থেকে শীর্ষে আছে মৌলভীবাজার। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে হাসপাতালে যে জিন এক্সপার্ট মেশিন আছে সেটা ব্যবহার করে আমরা এখানে করোনা টেস্টের ব্যবস্থা করব। ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত অফিশিয়াল কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। প্রশিক্ষণের কাজও দ্রুত শেষ হবে। জেলার একমাত্র জুড়ী ছাড়া প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালেও এই জিন এক্সপার্ট মেশিন আছে। এটা দিয়ে সাধারণত যক্ষার টেস্ট করা হতো। তবে পিসিআর ল্যব চালুর কোনো প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমি পিসিআর ল্যাবের দাবি জানিয়েছি।
উল্লেখ্য, জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রদানকৃত তথ্যমতে, গত মার্চে এই জেলাতে সংক্রমের হার ছিল ২২.২ শতাংশ চলতি মাসে কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশে। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬২৮টি নমুনা পরীক্ষার জন্য ঢাকা এবং সিলেটের ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ এসেছে ২ হাজার ১১০টি এবং নেগেটিভ এসেছে ১০ হাজার ৬৬৫টি নমুনা পরীক্ষার ফল। ফলোআপ টেস্টেও ১৩০ নমুনার ফল পজিটিভ এসেছে। নষ্ট হয়েছে ৬২৫টি নমুনা। এখনো ৯৮টি নমুনার ফল আসেনি। জেলায় বর্তমানে করোনার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬০। তার মধ্যে তিনজন হাসপাতালে, বাকিরা নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৪ জন।
বর্তমানে করোনা সংক্রমন মোকাবেলা সহ জেলাবাসীর ভোগান্তি কমাতে সার্বিক দিক বিবেচন করে অতিদ্রুত মৌলভীবাজারে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে করোনা পরীক্ষা করার দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল।