বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সফল অভিনেতা দেব আনন্দ’র জন্মদিন আজ।
এ প্রজন্মের খুব বেশি মানুষ হয়ত তাকে চেনেন না। কিন্তু সিনেমার স্বর্ণালী ইতিহাসের সঙ্গে যাদের অল্প-বিস্তর যোগাযোগ আছে, তাদের কাছে দেব আনন্দ এক অবিস্মরণীয় নক্ষত্র।
১৯২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাবের শাকারগড়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে যা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের অন্তর্ভূক্ত। দেব আনন্দের পুরো নাম ধর্মদেব পিসোরিমল আনন্দ। তার বাবা পিসোরি লাল আনন্দ ছিলেন একজন খ্যাতনামা অ্যাডভোকেট।
তিনি পড়াশোনার সূচনা করেছেন করেছেন স্যাক্রেড হার্ট স্কুলে। এরপর লাহোর সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পবের্তীতে তার বড় ভাই চেতন আনন্দের সঙ্গে ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেন। সেখানে যাতায়াতের মাধ্যমে অশোক কুমারের অভিনয় দেখে অনুপ্রাণিত হন দেব আনন্দ। সেই অনুপ্রেরণা থেকেই অভিনয়ের কথা মাথায় আসে তার।
১৯৪৬ সালে দেব আনন্দকে কাজের প্রস্তাব দেয় প্রভাত ফিল্মস। সিনেমার নাম ‘হাম এক হ্যায়’। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির গল্পে নির্মিত সিনেমায় দেব আনন্দের অভিনয় প্রশংসিত হয়। এই সিনেমায় শুটিং করতে গিয়ে অভিনেতা ও নির্মাতা গুরু দত্তের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সে সময় তারা একটি বিষয়ে সম্মত হন যে, তাদের দু’জনের মধ্যে যে-ই সফল হোক না কেন, পরবর্তীতে অপরজনকে সহযোগিতা করবে। পরবর্তীতে দেখা যায় যে, দেব আনন্দ কোনো সিনেমা প্রযোজনা করলে সেটা নির্মাণ করেছেন গুরু দত্ত; আবার গুরু দত্ত অন্য কোনো হাউজের সিনেমা নির্মাণ করলে সেখানে অভিনয় করেছেন দেব আনন্দ।
চল্লিশের দশকের শেষ ভাগে দেব আনন্দ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেন, যেগুলো ছিল মূলত নারীকেন্দ্রিক। আর সেই নারী চরিত্রে ছিলেন সুরাইয়া। একসঙ্গে কয়েকটি সিনেমায় কাজ করে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দেব ও সুরাইয়া জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন সাতটি সিনেমায়। এগুলো হচ্ছে- ‘বিদ্যা’, ‘জিত’, ‘শায়ের’, ‘আফসার’, ‘নিলি’, ‘দো সিতারে’ ও ‘সানাম’। প্রতিটি সিনেমাই ছিল বক্স অফিসে সফল। কিন্তু তাদের অভিনীত সিনেমা যতই সফল হোক না কেন, তাদের প্রেম আর সফল হয়নি। তাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম।
দেব আনন্দের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদের পর কয়েক বছর কাজ করেছেন সুরাইয়া। কিন্তু বেশি দিন আর নিয়মিত থাকেননি। ১৯৬৩ সালের পর আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি সুরাইয়াকে। শুধু তাই নয়, গোটা জীবনে তিনি আর বিয়েই করেননি! আর দেব আনন্দ বিয়ে করলেও সংসার জীবনে সুখী হতে পারেননি। কারণ সারা জীবন মনের ভেতরে পুষে রেখেছেন সেই সুরাইয়াকেই।
সুরাইয়ার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দেবের ক্যারিয়ার আরও ঝলমলে হয়ে উঠলো। একের পর এক সুপারহিট সিনেমা আসতে থাকলো তার ঝুলিতে। তিনি হয়ে উঠলেন হিন্দি সিনেমার শীর্ষ জনপ্রিয় নায়ক।
১৯৪৯ সালে দেব আনন্দ তার ভাই চেতন আনন্দের সঙ্গে গড়ে তোলেন নবকেতন ফিল্মস নামের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বহু সিনেমা প্রযোজনা করেছেন। এখান থেকে প্রযোজিত দ্বিতীয় সিনেমা ছিল ‘বাজি’। এটি নির্মাণ করেন গুরু দত্ত।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দেব আনন্দ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘তেরে ঘর কে সামনে’, ‘হরে রামা হরে কৃষ্ণ’, ‘গাইড’, ‘কালা পানি’, ‘পেয়িং গেস্ট’, ‘জুয়েল থিফ’, ‘হাম দোনো’, ‘প্রেম পূজারী’, ‘জনি মেরা নাম’, ‘তিন দেবিয়া’, ‘আসলি-নাকলি’, ‘বোম্বাই কা বাবু’, ‘সি আই ডি’, ‘বাজি’, ‘কালা বাজার’, ‘তেরে মেরে সাপনে’, ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’, ‘সোলভা সাল’, ‘গেম্বলার’, ‘ন দো গেয়ারা’, ‘জাল’, ‘জালি নোট’, ‘হাউজ ন.৪৪’, ‘মহল’, ‘মানজিল’, ‘রাহি’, ‘মুনিমজি’, ‘লাভ ম্যারেজ’, ‘সানাম’, ‘জিদ্দি’, ‘শরীফ বদমাশ’ ও ‘আওয়াল নাম্বার’ ইত্যাদি।
দেব আনন্দের হাত ধরে হিন্দি সিনেমায় এসেছেন অনেক নায়ক-নায়িকা। তাদের কেউ কেউ হয়েছেন বিখ্যাত, কিংবদন্তি। বলিউডের ড্রিমগার্ল’খ্যাত হেমা মালিনী, কিংবা জিনাত আমানের মতো কালজয়ী সুন্দরীরা তার মাধ্যমেই মুম্বাই সিনেমায় পা রেখেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে দেব আনন্দ বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী কল্পনা কার্তিককে। ১৯৫৪ সালে তাদের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। তাদের নাম সুনিল আনন্দ ও দেবিনা আনন্দ।
২০১১ সালের ৩ ডিসেম্বর লন্ডনে দ্য ওয়াশিংটন মেফেয়ার হোটেলে অবস্থানকালীণ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু করেন দেব আনন্দ। ওই বছরই মুক্তি পেয়েছিল দেব আনন্দ অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা ‘চার্জশিট’।