১৯৩৮ সালে চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় প্রতিষ্ঠিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে পরিচিতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার ডিস্টিলারিটির জাতীয়করণ করেন।
দেশের একমাত্র লাইসেন্সধারী অ্যালকোহল উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটি মদ বিক্রি এবং লাভে দুটোতেই রেকর্ড গড়েছে। কোম্পানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদায়ী অর্থবছরে মোট বিক্রি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। শুধু ডিস্টিলারি ইউনিট বা মদ উৎপাদন থেকে তাদের আয় প্রায় ৩৬৭ কোটি টাকা, লাভ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। ২০২১-২২ অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ প্রুফ লিটার বেশি মদ বিক্রি করেছে বলে সূত্রে জানা যায়।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) শুল্ক ফাঁকি রোধ করতে বিদেশী মদ আমদানিতে নজরদারি বাড়িয়েছে। যার ফলে মদ আমদানি কমে যাওয়ায় দেশে অনুমোদিত বারগুলোতে বিদেশী মদের সংকট দেখা দেয়। এই সংকটের কারনেই কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড এর উৎপাদিত মদের চাহিদা বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। চাহিদা যদি আরও বাড়ে, বিদ্যমান ফ্যাক্টরিতে বাড়তি চাহিদা পুরণে মদ উৎপাদন সম্ভব বলে কোম্পানী সূত্রে জানা যায়।
কেরু অ্যান্ড কোং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোসারুফ হোসেন বলেন, “আগের বছরের চেয়ে এবার ২৫-৩০ শতাংশ বিক্রি বেড়েছে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ কোম্পানির বিক্রি বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।”
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বর্ধিত চাহিদা পুরণে কোম্পানির বিদ্যমান ক্যাপাসিটির ব্যবহার বেড়েছে, তারপরও একটি বড় অংশ এখানো অব্যহৃত রয়েছে। চাহিদা যদি আরও বাড়ে, বিদ্যমান ফ্যাক্টরিতে বাড়তি চাহিদা পুরণে মদ উৎপাদন সম্ভব হবে। ম্যানুয়াল সিস্টেমের পরিবর্তে অটোমেশন পদ্ধতিতে মদের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেরুর চিনি ইউনিটকে বড় লোকসান গুনতে হয়ে়ছে। তবে ঠিক কত লোকসান হয়েছে তা জানা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে চিনি উৎপাদনের লোকসান সমন্বয়ের পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৭০ কোটি টাকা, যা বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
বর্তমানে চিনি, ডিস্টিলারি, ফার্মাসিউটিক্যালস, বাণিজ্যিক খামার, আকন্দবাড়িয়া খামার (পরীক্ষামূলক) এবং জৈব সার উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে শুধু ডিস্টিলারি ও জৈব সার ইউনিটই লাভজনক।
প্রতিষ্ঠানটি আখের রসের গুড় থেকে অ্যালকোহল এবং বিভিন্ন ধরনের স্পিরিট তৈরি করে, যা চিনি উৎপাদনের উপজাত। চিনি উৎপাদনের জন্য আখের রস আহরণের পর গুড়, ব্যাগাস এবং প্রেস মাড উপজাত পাওয়া যায়।
মদ বা অ্যালকোহল উৎপাদনের প্রধান উপাদান হল গুড়। গুড়ের সাথে ইস্ট প্রক্রিয়াকরণের পরে অ্যালকোহল তৈরি করা হয়। ডিস্টিলারি ইউনিট যে ব্র্যান্ডের মদ তৈরী করে তা হলো- ইয়ে়লো লেভেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাসাও, জারিনা ভদকা, রোজা রাম এবং ওল্ড রাম।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম এদের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।